মাওলানা শাহ আব্বাস আলী আল ক্বাদরী ও গাজীপুরে প্রথম গরু জবাইয়ের ইতিহাস

খলিলুর কাদেরীঃ মাওলানা শাহ আব্বাস আলী আল ক্বাদরী (১৮২৭-১৯৬৬) পীরে কামিল মাওলানা শাহ সুফি আব্বাস আলী আল ক্বাদরী (রহ.) কাপাসিয়া থানার বারিষাব ইউনিয়নের লোহাদি গ্রামে ১৮২৭ সনে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ছিলেন মাওলানা মোঃ আহসান উল্লাহ। ৪ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়ো ছিলেন। আরব তথা মধ্যপ্রাচ্য থেকে আগত পীর দুদু মিয়ার বংশধর তিনি। সারাদেশে ঘুরে ঘুরে তিনি ইসলাম প্রচার করেন এবং বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন। সকাল ও সন্ধ্যায় বিনামূল্যে ছোটো ছোটো ছেলেমেয়ে ও বয়স্কদের কোরআন শিক্ষা দিতেন।



মাতৃভাষা বাংলার পাশাপাশি তিনি আরবি, ফারসি ও উর্দু ভাষায়ও দক্ষতা অর্জন করেন। তিনি তাসাউফ তত্ত্বের অধিকারী ছিলেন। এ অঞ্চল ছাড়াও ভারত পাকিস্তান ও মায়ানমারেও তাঁর ভক্ত ও মুরিদান ছিল। বিশেষ বিশেষ ভক্তদের তিনি আধ্যাত্মিকতা শিক্ষা দিতেন।

১৯৬২ সনের ১ মার্চ বরমী বাজারের পশ্চিম দিকে সোহাদিয়া দরগারটেক দায়রায়ে আব্বাসিয়া জামে মসজিদ উদ্বোধন করেন।

বাড়িতে মেহমান কিংবা কাজের লোক থাকলে তাদের নিয়ে একত্রে খাবার খেতেন নতুবা বাড়ির সকলকে নিয়ে একসঙ্গে খাবার খেতেন।

বিশেষ কোনো খাবারের আয়োজন হলে যেমন ডিম, গোস্ত, বড়োমাছ ইত্যাদি মেহমান, কাজের লোক ও বাড়ির সদস্যদের মাঝে সমানহারে বন্টন করে পরিবেশন করার ব্যবস্থা করতেন।

তিনি ভাওয়াল রাজা রামেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী ও রাণী বিভাবতী দেবীর মামলার সাক্ষী ছিলেন। তিনি ভারতের আসাম, কাপাসিয়া থানার বারিষাব ইউনিয়নের লোহাদি ও সর্বশেষ বরমী ইউনিয়নের সোহাদিয়া গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। প্রত্যেকটি বাড়িই বহাল ছিল।

ভাওয়াল রাজার এলাকায় সে সময় কেউ গরু জবাই বা কোরবানি দিতে পারত না। কীভাবে এর সমাধান করা যায়, দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি তা ভাবছিলেন। অবশেষে তিনি এক অভিনব কৌশল অবলম্বন করলেন। মাওলানা শাহ আব্বাস আলী (রহ.) ও তাঁর চাচা মাওলানা হাবিউল্লাহ জয়দেবপুর বাজার থেকে একটি বড়ো ষাঁড়গরু ক্রয় করে এনে ভাওয়াল রাজবাড়ির মেইন গেইটে জবাই করে রেখে চিঠিতে মাওলানা সাহেবগণের ঠিকানা লিখে রেখে চলে আসেন সকালবেলা সংবাদ পেয়ে রাজা ক্ষিপ্ত হন। চিঠির ঠিকানা বরাবর তাৎক্ষণিক আদালতে মানহানির মামলা করেন। দীর্ঘদিন মামলা পরিচালিত হওয়ার পর অবশেষে আদালত মাওলানা সাহেবের পক্ষে রায় দেন। রায়টি ছিল: প্রত্যেক রাজকাচারির মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি ষাঁড়গরু ক্রয় করে জবাই করে। যথাস্থানে বিতরণ করতে হবে। রায় অনুযায়ী রাজা তাই করলেন। অবশ্য পরবর্তী সময়ে মাওলানা আব্বাস আলী সাহেবের সাথে রাজার সুসম্পর্ক তৈরি হয়।

মামলার হাজিরা দেওয়ার জন্য রেলযোগে তিনি ঢাকা যেতেন। অধিকাংশ সময় তিনি লোহাদি গ্রাম থেকে পায়ে হেটে বরমী হয়ে সাতখামাইর স্টেশন থেকে রেলগাড়িতে উঠতেন। বরমী ও সাতখামাইর এর মাঝখানে সোহাদিয়া গ্রাম। গ্রামটিতে তেমন বাড়িঘর বা বসতি ছিলনা। যারা ছিল তারা পানির জন্য অনেক কষ্ট করত। কোনো একদিন নফল সালাত আদায় করে তিনি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করেন অত্র এলাকার লোকজনের সেবা করার সুযোগ করে দেয়ার জন্য আল্লাহ পাক তাঁর দোয়া কবুল করলেন। মামলার রায় নিয়ে ফিরার পথে সোহাদিয়া নামক স্থানে বাড়ির ভিত্তি স্থাপন করেন।

এ-স্থানে পূর্ব থেকেই হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর সঙ্গী আবদুল্লাহ মোবারক (রহ.)-এর মাযার অবস্থিত। ঠিক এর পাশেই তিনি জমির বায়না করেন। অল্পদিন পরেই তিনি এখানে বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেন এবং পথিক ও এলাকাবাসীর জন্য পুকুর খনন করে পানির সুব্যবস্থা করেন।

অবশেষে মাওলানা শাহ্ আব্বাস আলী আল ক্বাদরী ১৯৬৬ সনে ১৩৯ বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন। সোহাদিয়া গ্রামেই পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

শ্রীপুর গুনিজন বই থেকে আমাদের বাড়ি ও আমাদের বংশের কিছু ইতিহাস। বাকী ইতিহাসগুলো জানা থাকলেও বাবার দাদা যে, বিখ্যাত মামলা ভাওয়াল সন্ন্যাসী মামলার স্বাক্ষী ছিলেন বিষটি জানা ছিল না। বইটা পরার মুহূর্তটা খুবই মজাদার ছিল। ধন্যবাদ Aziz Gazi ভাই ও কবির হোসেন কে খুব নিখুত ভাবে এই বইয়ের লিখাগুলো লিখার জন্য।
আমার বাবার নাম- আব্দুল আউয়াল কাদেরী
দাদার নাম- ছাদেকুচ্ছামাদ কাদেরী
উনার বাবা- আব্বাছ আলী কাদেরী
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url