ঈসা খাঁর সমাধি ও ঈসা খাঁ এর জীবনী সংক্ষেপ
ঈশা খাঁর কবর ও ঈসা খাঁ এর জীবনী সংক্ষেপঃ
১৫২৯ খ্রিষ্টাব্দ বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে জন্ম গ্রহণ করেন ঈসা খাঁ। তার দাদা সুলতান গিয়াসউদ্দীন মাহমুদ-এর অধীনে দীউয়ান হিসেবে চাকরি করতেন তার মৃত্যুর পর পুত্র কালিদাস গজদানী পিতার দীউয়ান পদ লাভ করেন। পরবর্তিতে তিনি হিন্দু থেকে মুসলমান হয়ে নাম ধারণ করেন সোলায়মান খাঁ। অতঃপর গিয়াসউদ্দীন সুলতান মাহমুদের কন্যা সৈয়দা মোমেনা খাতুনকে বিয়ে করে সরাইলের জমিদারি লাভ করেন। ১৫২৯ সালে তাদের ঘরেই জন্ম নেন ঈসা খাঁ।
সুলতান গিয়াস উদ্দীন মাহমুদের মৃত্যুর পর সোলায়মান খাঁ হয় এই অঞ্চলের শাসনকর্তা। ১৫৪৫ খ্রিস্টাব্দে ইসলাম শাহ দিল্লীর সিংহাসনে আরোহনের পর সোলায়মান খাঁর সাথে যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং যুদ্ধে সোলায়মান খাঁ পরাজিত ও নিহত হন এবং পুত্র ঈসা খাঁ ও ঈসমাইল খাঁ বন্ধি হন। পরবর্তীতে তাদের দুজন কে দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হয় ইরানী এক বণিকের কাছে।
১৫৬৩ খ্রিস্টাব্দে তাজ খান কররানী ভাইপোদ্বয় ঈসা ও ইসমাইল এর খুজ পেয়ে বড় অঙ্গকের অর্থের বিনিময়ে তাদের মুক্ত করে আনেন। দেশে ফিরে চাচার প্রচেষ্টায় নিজ পিতার সরাইলস্থ জমিদারি লাভ করেন।
১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দে ঈসা খান আফগান শাসকদের মুঘল আক্রমণ মুকাবিলায় সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসেন। ১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দে ঈসা খাঁ সোনারগাঁও-এর পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে মুঘল নৌবহরকে বিতাড়িত করতে দাউদ খান কে সাহায্য করেন। বাংলার স্বাধীন সুলতান দাউদ খাঁর রাজত্বকালে ঈসা খাঁ বীরিত্বের জন্য বেশ খ্যাতি লাভ করেন।
১৫৭৫ সালে বাংলার সুবেদার মুনিম খাঁর মৃত্যু হলে দাউদ খাঁ স্বাধীনতা ঘোষণা করে নিজের নামে বাংলা ও বিহারের খুতবা পাঠ করান। স্বাধীন ভূঁইয়ারাও তাকে অনুসরণ করে মুঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হন। বারো ভূঁইয়া বা বারো জন প্রতাবশালী ভূঁইয়াদের মধ্যে অন্যতম প্রধান জমিদার ছিলেন ঈঁসা খা।
১৫৯৬ সালে ঈসা খাঁ এবং মুঘল সেনাপতি মানসিংহের সাথে এক দ্বন্দ্ব যুদ্ধ সংগঠিত হয়। যুদ্ধের এক পর্যায়ে মুঘল সেনাপতি মানসিংহের তরবারি ভেঙ্গে যায়। মানসিংহের তরবারি ভেঙ্গে গেলে ঈসা খাঁ তাকে আঘাত না করে আরেকটি তরবারি দিয়ে আবার যুদ্ধের আহবান জানান কিন্তু মানসিংহ তরবারি না নিয়ে ঈসা খাঁ কে আলিঙ্গন করেন। ঈসা খাঁর সাহস, বীরিত্ব ও মহানুভবতায় মুগ্ধ হয়ে মানসিংহ তার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করেন।
এর পরে ঈসা খাঁ ও মুঘলদের মধ্যে একটি বন্ধুত্ব স্থাপন হয় এবং সম্রাট আকবের সাথে সাক্ষাত করেন। সম্রাট আকবরের সাথে সাক্ষাতের পর সম্রাট তাকে বীরত্বের জন্য মসনদ-ই-আলা উপধি প্রদান করেন। আবার অনেকে বলে থাকেন্ম দাউদ খানের প্রতি আনুগত্যের জন্য ঈসা খাঁ এই উপাধিটি লাভ করেন।
ভারত থেকে ফিরে এসে ঈসা খাঁ ভাটির বিশাল অংশে তাঁর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে এবং সে অঞ্চলে বিশাল স্বাধীন রাজ্য গঠন করে; সে সময় এ অঞ্চলের ২২টি পরগনা ঈসা খাঁ শাসনাধীন ছিল।
ঈসা খাঁর রাজ্য পরিচালনা করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় দূর্গ ঘঠন করেছিল। গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার এই বক্তারপুর গ্রামেও তার একটি দূর্গ ছিল। ১৫৯৯ সালে সোনারগাঁও ফেরার পথে অসুস্থ হয়ে পরলে তিনি এই বক্তারপুর দুর্গে আশ্রয় নেন এবং এখানেই তার মৃত্যু হয়।