কাপাসিয়ার দরদরিয়া দুর্গ একডালা দুর্গ নয়
কাপাসিয়ার দরদরিয়া দুর্গ একডালা দুর্গ নয়
গাজীপুরের ইতিহাসপ্রেমী আগ্রহীরা এসব নোট রাখতে পারেন।
পাল রাজাদের পতনের পর ভাওয়ালে গাজী বংশের প্রতিষ্ঠা হয়।পাল রাজারা বৌদ্ধ ধর্মের ছিলেন।
দরদরিয়া, চিনাশুখানিয়া, কপালেশ্বর এসব অঞ্চলে ছোট ছোট পাল রাজার অস্তিত্ব ছিল। দরদরিয়ায় আবিষ্কৃত দুর্গটা কিন্তু পাল রাজাদের কীর্তি।
যতীন্দ্রমোহন রায় ১৯১২ সালে ঢাকার ইতিহাস বইতে এসব লিখেছেন।
দরদরিয়ার পাল বংশীয় চণ্ডাল গোত্রের বৌদ্ধ রানীর প্রাসাদকে একডালা দুর্গ নামে উপস্থাপনের হাস্যকর চেষ্টা।
অথচ এই কাপাসিয়াতেই একডালা নামে ঐতিহাসিক গ্রাম রয়েছে।যেই গ্রামটা জেমস রেনেলের মানচিত্রেও স্পষ্ট নির্দেশিত বর্তমান জায়গাতেই।
জেমস রেনেলের মানচিত্রে বর্তমান কাপাসিয়ার তিনটা জায়গার নাম রয়েছে।টোক,সিংহশ্রী এবং একডালা।
গৌড়-পাণ্ডুয়ার বিকল্প একডালা দুর্গ হিসেবে কাপাসিয়ার একডালাকে দাবী করা হত এতদিন।
আমি একমত ছিলাম না কখনোই।কেননা ইতিহাসের প্রক্ষিতে দিল্লীর সুলতানের কাপাসিয়া আগমনের কোনো নজির নাই।
এবার দরদরিয়াকেই একডালা বলা হচ্ছে।কি হাস্যকর!
১৩৫৪ সালে দিল্লীর সুলতান ফিরুজ শাহ লাখ লাখ লোক-লস্কর নিয়ে বাংলার উদ্দেশ্যে আসেন।
কেননা বাংলার সুলতান ইলিয়াস শাহ পুরো বাংলাকে এক করে ১৩৫২ সালে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ইলিয়াস শাহর রাজধানী ছিল পাণ্ডুয়াতে।যা বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলা।
ফিরুজ শাহ দিল্লী থেকে বের হবার পর পুরো পথের বিবরণ রয়েছে তারিখ ই ফিরুজশাহী,সিতার ই ফিরুজশাহী এসব বইতো।লেখকেরা অভিযানের সাথেই ছিলেন কিংবা তাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলো। সেসবের বিবরণ গৌড়-পান্ডুয়ায় পর্যন্তই সীমাবদ্ধ।সেখানে ভাওয়ালের কথা নেই, পূর্ববাংলার কথা নেই ।
নৌপথের বিকল্প ছিল তখন?লাখো সৈন্য নিয়ে ফিরোজ শাহ কাপাসিয়ায় আসার কোনো স্বাক্ষ্য ইতিহাসে আছে?
দিল্লীর কোনো নৌবাহিনী তখন ছিলনা।
এমনি ১৬০৮ সালের দিকে মুঘল সুবাদার ইসলাম খাঁ সেই দিনাজপুর, করতোয়া নদী ঘুরে ঢাকায় আসেন।
কেননা গঙ্গা-পদ্মার প্রবাহ তখন এমন ছিলনা।
প্রফেসর আবদুল করিম এই একডালা বিতর্ক নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন।একজন বাদে সব বিশ্লেষকের দাবী একডালা দুর্গটি ভারতের দিনাজপুরে অবস্থিত।
যেটা রাজধানী পাণ্ডুয়া থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
সেই মালদহ থেকে এত দূরের কাপাসিয়া এসে দুর্গে অবস্থান নেওয়ার কথা ইলিয়াস শাহের?
সোনারগাঁওয়ে রাজধানী থাকলে এক কথা ছিলো।১৩৫২ সালে ইলিয়াস শাহ সোনারগাঁও দখল করেন।
আমাদের কাপাসিয়ার একডালা গ্রামে ঈশা খাঁর দুর্গ ছিল।যেটা এখন নদীতে বিলীন।
আমাদের দরদরিয়ার রানীর বাড়িটা কপালেশ্বরের দিঘী,ইন্দ্রপুরের দিঘী, শ্রীপুরের ওয়াইদ্দ্যার দিঘী, চিনাশুখানিয়ার রাজাপ্রাসাদের ভিটা ,সেখানকার ডোসকা রাজা ওসবের সমসাময়িক।তারা একই গোষ্ঠীর ছিলেন।
দরদরিয়া এমনিতেই ঐতিহাসিক।১৬০৮ সালের দিকে সুবাদার ইসলাম খাঁ এসেছিলেন রাজধানী স্থাপন করতে।তখনও ঢাকায় রাজধানী হয়নি।কেননা পাশের অঞ্চলেই ছিল ঈশা খাঁর এগারোসিন্দুর।
কিন্তু দরদরিয়ায় নদীর পাড় অনেক বেশি উঁচু বলে সেই পরিকল্পনা বাতিল হয়।
দরদরিয়ায় বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের বাড়ি।
এরপর ভাওয়ালে গাজীদের মাধ্যমে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা পায়।
নাজিব মাহফুজ খান