আমার ভারত ভ্রমণের কিছু অভিজ্ঞতা

গত ১ সপ্তাহ ছিলাম ইন্ডিয়া: আলহামদুলিল্লাহ আজকে দেশে ফিরে এসেছি। ১ মাস পূর্বে প্ল্যানটা করা এবং টিকেট কনফ্রাম করা ছিল বিধায় যাওয়া। পূর্ব প্রস্তুতি না থাকলে অবশ্যই যাওয়া হতো না বা যেতাম না।

এই সময়টাতে সেখানের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি:
প্রথমত বাংলাদেশ পরিস্থিতি খারাপ থাকায় বাংলা টাকার সঠিক রেট পাচ্ছিলাম না, বিশেষ করে আগ্রাতে কেউ বাংলা টাকা নিচ্ছলোই না! যা-ও এক যায়গায় পেয়েছিলাম সেখানে বাংলা ১ টাকায় তারা দিচ্ছিলো ০.৫০ রুপি...! দিল্লিতে রেট ছিল ০.৬৮ রুপি (গতকাল)।
প্রথমে গেদে/ দর্শনা বর্ডারে ঢুকার পরেই বাংলাদেশ পি.এম এর আলোচনা শুনতে হলো বা করতে হলো। (বিএসএফ) থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ।
বর্ডার পার হয়ে ট্রেনেও একই আলাপ। কলকাতার বাস সুপারভাইজার ও দুএকজন এর সাথে আলোচনা প্রায় ১ ঘন্টা৷ (বাসের অপেক্ষায় থাকাকালীন) উনার কিছু কথা এমন ছিল:- *বাংলাদেশ এর আগের সরকার ভালো ছিল, এখন যে এসেছে সে জা-লি-ম। *বাংলাদেশের রিজার্ভ অল্প। *বাংলাদেশের খাবার আছে মাত্র ২ মাসের। *ভারত এখন আর বাংলাদেশ কে সাহায্য করবে না সেজন্য বাংলাদেশ পাকিস্তানের মতো হয়ে যাবে। *হি*ন্দুদের উপর ব্যাপক আ*ক্র*ম*ণ হচ্ছে। [আমরা যেটুকু পেরেছি সত্য বুঝানোর চেষ্টা করেছি]
পাটনাতে ছিলাম ১ দুপুর; সেখানে তেমন একটা প্রভাব নেই বাংলাদেশ নিয়ে; শুক্রবার মসজিদে দেখলাম পুলিশ নিরাপত্তা দিচ্ছে মুসলিমদের নামাজ আদায়ে। এখানে ওদের সাথে তেমন আলোচনা করা হয়নি।
দিল্লিতে রাস্তাঘাটে আলোচনা হয়েছে মোটামুটি, আমরা বাঙ্গালি জানলেই তারা বাংলাদেশ পি.এম নিয়ে আলোচনা করতে খুব আগ্রহী হচ্ছিল। মজার বিষয় হলো শিক্ষিত হিন্দু এবং মুসলিমরা ছাত্রদের এই আন্দলোন কে পজেটিভ ভাবেই নিচ্ছে। অন্যদিকে শিক্ষিত বেশিরভাগ মানুষেরই বাংলাদেশ নিয়ে এতো ভাবার সময় নেই।
সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয় হলো: আমরা যে যে যায়গায় গিয়েছি এবং মানুষের সাথে আলোচনা করেছি প্রথম ভারত ভ্রমণে মনে হয়েছে ওই দেশের মুসলিমরা মুটামুটি স্বাধীনভাবেই চলাফেরা করে একে অপরের সাথে মিলেমিশেই থাকে। কিন্তু সম্প্রদায় ভিত্তিক বড় কোন ঝামে*লা হলে মুসলিমদের সমস্যা হয়। এমনিতে চলাফেরায় কেউ কাউকে ছোট করে না। না হিন্দু মুললিম কে বা মুসলিম হিন্দুদের। (আমি বুঝাইতে চাচ্ছি যে, আমাদের দেশের অনেকেই এক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মের মানুষকে একটু বাকা চোখে দেখে)। মুসলিমরা ঐক্যবদ্ধ থাকে, বাংলাদেশের মুসলিমদের পেলে সেখানের মুসলিমরা খুবই খুশি হয়। এক মুসলিম অন্য মুসলিম কে সর্বোচ্চ দিয়ে সাহায্য করে মনে হয়েছে। বাংলাদেশীরা বাংলাদেশীদের পেলে আগ্রহী হয়। (সবাই না)
সবদিক থেকে ভারত খুবই বড় একটি দেশ, যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই উন্নত বিশেষত ট্রেন ভ্রমণ) খাবার-দাবারের ব্যাপারে উদাসীন (কিছুটা অপরিচ্ছন্ন), মানুষের ব্যবহার ভালোই মনে হয়েছে, অত্যন্ত হিসাবী সবাই, হেল্পফুল তবে দা*লা*ল এর পরিমাণ বেশি। যেমন ভ্রমণকারীদেরকে টাকার বিনিময়ে সাহায্য করতে চায়। জোর করে সাহায্য করতে চায়, এবং টাকা নেয়; যেটা আমার কাছে খুবই বিরক্ত লেগেছে।
মুঘল স্থাপনাগুলো খুবই ভালো লেগেছে, এসব যায়গার নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকা লোকগুলোর ব্যবহার অত্যন্ত ভালো পেয়েছি। এই মুসলিম স্থাপনাগুলো আমাদের ধারণার চেয়ে আশ্চর্যজনক... শতশতবছরের পুরোনো স্থাপগুলো দেখলে মনেহয় সেদিন তৈরি হয়েছে... বিশেষ করে হুমায়ুন টম্বের উপরে গিয়ে এক মুহূর্তের জন্য হারিয়ে গিয়েছিলাম সেই মুগল আমলের সম্রাটদের ইতিহাসের পাতায়... এতো বড় প্রাচীর, এতো বড় মিনার, বিশাল এড়িয়া জোরে স্থাপনা, কঠোর নিরাপত্তার স্থান, সত্যিই অভিভূত করে তোলে... সেই তাজমহল, যা কৈশোর থেকে স্বপ্ন ছিল নিজ চোখে দেখার, তা দেখে আসলাম...
খলিলুর কাদেরী ১৪ আগস্ট ২০২৪ খ্রি.
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url